…বন্ধু বুদ্ধজ্যোতি চাকমাসহ কিশোরী কন্যা ময় মহাজনের আপ্যায়নে শাপলা লতা-সিঁদোলের (সিঁদোল বা নাপ্পি, একধরণের শুটকি মাছ) ঝোল তরকারি ও খানিকটা গরম ভাতে সেরে ফেলা হবে সকালের খাবার। এক ফাঁকে “ময়” কথাটির অর্থ জানতে চাওয়ায় লাজুক কিশোরীর চতুর উত্তর হবে এ রকম : “যখন আপনারা ক্রেওক্রাডং-এর চুড়ায় পৌঁছাবেন, তখনই জানতে পারবেন এই নামের অর্থ!” অবশ্য আরো পরে জানা হয়েছে, বম ভাষায় “ময়” কথাটির মানে সুন্দরী। ক্রেওক্রাডং-এর খাড়া পাহাড়ি পথ ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা চলা শুরু। দীর্ঘতর পাহাড়ের পথযাত্রায় মুগ্ধ হতে হয় বিচিত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। চারপাশে সুনসান নীরব পাহাড়ের পরে পাহাড়, মেঘের পরে মেঘ, অরণ্যর পরে অরণ্য, সবুজের পর আরো সবুজ...যেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি টেলিভিশনের ভেতর ঢুকে পড়া গেছে। ... ...
…"অতএব, আমরা হইহই করে বাসে চেপে বেরিয়ে এলাম জাদুঘর - ডোডোপাখির দিকে চোখ টিপে বললাম, সি ইউ দেন - চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জিটা আমাদের দেখে হইহই করে উঠল, মানুষ না দেখে দেখে বড্ডো ক্লান্ত ছিল সে-ও - ভিক্টোরিয়ার ঘাসগুলো বেড়ে উঠেছে অনেকটা এরই মধ্যে, বসতে গেলে একটু অস্বস্তিই হয় - সে হোক, আমাদের হাতে দস্তানা, মুখে ঢাকনা আঁটা। আসলে, ভুলে গেছিলাম, মারণাস্ত্র সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়।"… (বিষাণ) ... ...
…এবার দুজনে ছোট একটা পাহাড় থেকে নীচে নামতে থাকি। ছম ছম শব্দ এখন আরো প্রকট হচ্ছে। হঠাৎ টর্চের আলোয় এক বিস্ময়ের খানিকটা দেখে জুমলিয়ান দা’র বাহু আকড়ে ধরি। ‘ও দা, ও দা, মুই মরি যেম।’ ...অপর বাংলার পাহাড়ে পরিভ্রমণ… ... ...
শত ব্যস্ততা, নিত্যকর্ম, আর কর্পোরেট কার্টিসির ব্যুহ ভেদ করে বার বার মনের গহিনে গোপনে হানা দেয় পাহাড়ের গণহত্যা, গণধর্ষন, ত্রিপুরার শরণার্থী শিবির, কল্পনা চাকমা অপহরণ, মেশিন গানের গুলির ভেতর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মিছিল-- আরো অসংখ্য রক্তাক্ত অতীত স্মৃতি… কেউ জানে না সে এক গোপন হরর থ্রিলার যাত্রা, ব্যাং ব্যাং ক্লাবের একই কেভিন-যন্ত্রণা! আর ঘুমের ঘোরে এখনো ফিরে ফিরে আসে বাঘাইছড়ির সেই আশ্চর্য দেবশিশুর দল।... ... ...
“গারো আদিবাসীর ফসলের বীজ বোনার উৎসব রংচুগালার আয়োজন ক্রমেই কমে আসছে, সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। এর কারণ, সাংসারেকরা ধর্মান্তরিত হচ্ছেন, বা খ্রিস্টান হচ্ছেন, এমন নয়. সাংসারেকদের যে প্রবীন প্রজন্ম এই রীতিনীতি পালন করেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক বয়স্ক, তাদের বয়স ৭০ বা ৮০ বছর। প্রতি বছরই একজন-দুজন করে তারা মারা যাচ্ছেন। সাংসারেক ধর্মটি এমন নয় যে, কাউকে দীক্ষা দেওয়া যায়। তাকে আসলে জন্মগতভাবেই সাংসারেক হতে হয়। আবার অনেকে নতুন করে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।” ... ...
'রোমাঞ্চ কি রয়ে গেছে; গ্রামে অন্ধকারে ঘুম ভেঙে দেহের উপর দিয়ে শীতল সাপের চলা বুঝে যে-রোমাঞ্চ নেমে এলো, রুদ্ধশ্বাসস্বেদে ভিজে-ভিজে। সর্পিনী, বোঝনি তুমি, দেহ কিনা, কার দেহ, প্রাণ। সহসা উদিত হয় সাগরহংসীর শুভ্র গান। স্বর-সুর এক হয়ে কাঁপে বায়ু, যেন তুষত শীতে, কেঁদে ওঠে, জ্যোৎস্নার কোমল উত্তাপ পেতে চায়। রোমাঞ্চ তো রয়ে গেছে শীতল সাপের স্পর্শে মিশে।' (বিনয়) ... ...
‘একাত্তরের কথা কেউ মনে রেখেছে না কি? আর তাছাড়া আমি তো যুদ্ধ শুরু করেছিলাম মাত্র, শেষ করতে পারি নি। আমার যুদ্ধ ভারতীয় সেনারাই তো শেষ করে দিল’!…কথোপকথনে প্রয়াত পপসম্রাট, ১৯৭১ এর গেরিলা কমান্ডার আজম খান। ... ...
১৯৭১ এ স্বাধীনতার পর উর্দূভাষী আটকে পড়া পাকিস্তানীরা, যারা ‘বিহারী’ নামে এখনো পরিচিত, অনেকেই দেশবিভাগের সময় বিহার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা ঘোলকে বলতেন ‘মাঠা’। তো মোহাম্মাদপুরে বিহারী বসতিপূর্ণ এলাকায় বাসার গলির মুখে খুব ভোরে বিশাল এলমুনিয়ামের হাড়ি নিয়ে গাল ভাঙা, খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাঁড়ির বিহারী ঘোলওয়ালা বসতেন। তার হাড়িতে থাকতো ঘরে তৈরি ঘোল। হাড়ির মুখটি কাঁচের চৌকা টুকরো দিয়ে ঢাকা থাকতো। ওপরে বসানো থাকতো ছোট ছোট কাঁচের গ্লাস। মাঝারি মাপের এলমুনিয়ামের মাগ দিয়ে ক্রেতাদের ওইসব সব গ্লাসে ঢেলে দেওয়া হতো সুস্বাদু ফেনা ওঠা ঘোল। আর উঁকি দিলে হাড়িতে দেখা যেত ঘোলের ওপর বিস্কুট মাপের হলুদাভ মাখন ভাসতে। প্রতি গ্লাস দুই সিকি (তখনো একে ‘চার আনা’ বলা হতো) বা পঞ্চাশ পয়সা (‘আট আনা’) মাত্র। ঘোল ওয়ালা মাঝে মাঝে হাঁকতেন, ‘এই মাট্টঠাআআআআ…’! ... ...
তিনটি হাসপাতাল ছাড়া দেশের আর কোনো হাসপাতালে করোনা শনাক্তের ল্যাব নেই। চিকিৎসক-নার্সদের করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মেডিকেল কিট ইত্যাদি অল্প কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও নেই। ঢাকা মেডিকেলসহ অধিকাংশ হাসপাতালই এখনো করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতই নয়। যে ১০ টি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার সবই আবার ঢাকাতেই। করোনা ভীতির কারণে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই সীমিত করেছে চিকিৎসা সেবা। সাধারণ রোগিরা বিপাকে। এই বাস্তবতায় দ্রুত করোনার বিস্তার হতে থাকলে কী আছে আগামীতে? … ... ...
ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিশাল মিছিলে জেনারেল আইয়ুব বিরোধী সেই সময়ে একজন মুসলিম তরুণী প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দুই হাত মুখের কাছে গোল করে লিড শ্লোগানারের ভূমিকা পালন করছেন, ভাবা যায়? ... ...
মৌলবাদের উত্সমুখ যতদিন বন্ধ না হবে, ততোদিন অসির বিরুদ্ধে মসির অসম লড়াই চলতেই থাকবে। অন্যদিকে, আমরাও মুক্তমনার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে মরীয়া। মৌলবাদের ছুরির নীচে গলা পেতে দিতে সর্বদাই প্রস্তুত। আর নির্মম বাস্তবতা এই যে, শেষ পর্যন্ত হত্যা করে অভিজিতদের শেষ করা যায় না। কারণ আমরা আসলে একেকজন রক্তবীজের ঝাড়। যতোবারই হত্যা করো, ততোবারই আমরা জন্মাবো। অভিজিতের মরণ নাই। আমিই অভিজিৎ! ... ...
এই নিদানকালে মন ভাল করে দেওয়ার মতো একটি তাজা খবর! মানে, যে খবরে পাঠক মন দিলখুশ হয়, যেন বেশ একটা বসরাই গোলাপের সুবাস ছড়ায়, মৃদুমন্দ ফুরফুরে দখিনা বায়ু বয়, কান পাতলেই অস্ফুট শচিন কর্তা শোনা যায়, ‘আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই, বাংলাদেশের ঢোল‘ -- এটি হচ্ছে সে রকম একটি খবর। ... ...
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে শঙ্খ নদের দুপাড়ে বসবাসকারী অধিকাংশই মারমা ও ম্রো জাতিগোষ্ঠির পাহাড়ি মানুষ। তাদের অধিকাংশের পেশা জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ এক ধরণের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদের নাম - জুম)।... অবাক হওয়ার মতো কথা, এই নদটির নাম বাংলায় ‘শঙ্খ‘ কেন, তার কোনো ঐতিহাসিক তথ্য নেই। তবে অনেকে মনে করেন, সেই ব্রিটিশ আমলে বাঙালি আমলারা গেজেটিয়ার করার সময় এটিকে ‘শঙ্খ‘ নদ’ হিসেবে নথিভূক্ত করেন। যদিও শঙ্খ বা শাঁখ বলতে যে ধরণের সাদা সামূদ্রিক শামুকের কথা বোঝায়, নদের দুপাড়ে কখনোই এমন শঙ্খের অস্তিত্ব ছিল না। [*ছোটদের জন্য লেখা] ... ...
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ঘাগড়ার দেবতাছড়ি গ্রামের কিশোরী সুমি তঞ্চঙ্গ্যা। দরিদ্র জুমচাষি মা-বাবার পঞ্চম সন্তান। অভাবের তাড়নায় অন্য ভাইবোনদের লেখাপড়া হয়নি। কিন্তু ব্যতিক্রম সুমি। লেখাপড়ায় তার প্রবল আগ্রহ। অগত্যা মা-বাবা তাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। কোনো রকমে মেয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিটুকু পার করাতে পেরেছেন। কিন্তু এরপর? চটপটে পাহাড়ি মেয়েটি এই লেখককে বলে, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার লেখাপড়া এখানেই শেষ। এ সময় আমরা শুনতে পাই ‘মোনঘর শিশু সদন‘র কথা। সেখানে নাকি নামমাত্র বেতনে খুব ভালো লেখাপড়া হয়। এরপর আমি এই ... ...